শিরোনাম

২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:৫৭

বরিশালে কৃষকের মাঝে সাড়া ফেলেছে বঙ্গবন্ধু ধান-১০০

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২৪ ১:৪২ পূর্বাহ্ণ
Print Friendly and PDF

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল :: চলতি বোরো মৌসুমে বরিশালে প্রথমবার বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ আবাদ করেই কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তুলনামূলক কম সময় এবং কম খরচে রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমণ রোধ করার গুণসম্পন্ন এ ধান আবাদ করে বেশি ফলন পাওয়ায় আগামীতে এ ধানের আবাদ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দিন দিন দেশে জমির সংখ্যা কমে যাওয়া উৎকৃষ্ট জিংকসমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু ধান একদিকে যেমন দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তেমনি অন্যান্য জাতের চেয়ে এ ধানে উৎপাদন বৃদ্ধি দিগুন হবে।

আইএফডিসি’র ফিড দ্যা ফিউচার বাংলাদেশ ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার এক্টিভিটি (সিএসএ) কর্তৃক বাস্তবায়িত জিংক সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু-১০০ ও ব্রি-ধান-১০২ এর ধানের প্রদর্শনী মাঠের শষ্য কর্তন ও মাঠ দিবসে সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে জেলার গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের বাঘার গ্রামের প্রদর্শনী মাঠের কৃষক আল আমিন আকন বলেন, অন্যান্য ধানের তুলনায় এ ধানের ফলন ভালো। পাশাপাশি এ ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমণ রোধ করার ক্ষমতা থাকায় উৎপাদন খরচও কম হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতি শতক জমিতে এ ধানের ফলন হয়েছে এক মন করে। যা অন্যান্য ধানের তুলনায় দ্বিগুন। কম সময়ে ভালো ফলন ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এ ধান আবাদে উৎসাহিত হচ্ছেন অন্য কৃষকরাও। ইতোমধ্যেই তার কাছে অনেকে বীজ চাইতে আসছেন অনেক কৃষক।

উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ও ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে শস্য কর্তন অনুষ্ঠানে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিথুন বণিক বলেন, চলতি মৌসুমে মাহিলাড়া ইউনিয়নে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু-১০০ ও ব্রি-ধান ১০২ চাষ করা হয়েছে। শীত সহিষ্ণু, রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমণ রোধ করার ক্ষমতা থাকায় বেশি ফলনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ধানের উৎপাদন খরচও কম হওয়ার পাশাপাশি বাম্পার ফলন হয়েছে। তাছাড়া এ ধানে উৎকৃষ্ট জিংকের পরিমাণ বেশি থাকায় বিশেষ করে নারী ও শিশুদের পুষ্টিহীনতা দূর হবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

৩০ জন কৃষাণ-কৃষাণীর অংশগ্রহণে মাঠ দিবসের আলোচনা সভায় স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য কৃষক হুমায়ুন আকনের সভাপতিত্বে মাহিলাড়া ইউনিয়নের সার ও বীজ ডিলার জামাল সরদার বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার অনুরোধে চলতি মৌসুমের শুরুতে বঙ্গবন্ধু-১০০ ও ব্রি-ধান ১২০ একপ্রকার জোরকরেই কৃষকদের মাঝে বিক্রি করেছি। কিন্তু বর্তমানে ওইসব জমিতে এ ধানের বাম্পার ফলন দেখে অন্যান্য চাষীরা আগামী মৌসুমে এ ধানের চাষ করার আগ্রহ দেখিয়ে ইতোমধ্যে তাকে বীজ ধানের অর্ডার করা শুরু করেছেন।

আইএফডিসির সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু-১০০ ও ব্রি-ধান ১০২ ব্লাষ্টমুক্ত, জলবায়ু সহনশীল, জিংক সমৃদ্ধ ও ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকরা আগামীতে এ ধানের সম্প্রসারণ বৃদ্ধির আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত পুষ্টিসমৃদ্ধ উচ্চ ফলনশীল এ জাতের নতুন ধান মাহিলাড়ায় পরীক্ষামূলক চাষে ব্যাপক সাফল্য মিলেছে। মাঠ কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হক বলেন, মাহিলাড়া ইউনিয়নে প্রথমবারেই ভালো ফলন পাওয়ায় আগামীতে এ ধানের বীজ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, দেশের অন্যান্য ধান আবাদ করতে সময় লাগে ১৫৫ থেকে ১৬০ দিন। সেখানে বঙ্গবন্ধু-১০০ ধান আবাদ করতে সময় লেগেছে মাত্র ১৪৫ থেকে ১৪৮ দিন। তাছাড়া অন্যান্য ধানের চেয়ে এর ফলন প্রায় দ্বিগুন হয়েছে।

কমিউনিটি ফার্ম ডেভলপমেন্ট অফিসার মোঃ সফিউল ইসলাম বলেন, মাহিলাড়া ইউনিয়নের বাঘার গ্রামের পাঁচটি প্রদর্শনী প্লটে এই জাতের ধান হেক্টরে ৮.১০ থেকে ৯.৫ টন পর্যন্ত ফলন দিয়েছে। সেই হিসেবে শতাংশে ফলন দিয়েছে এক মণেরও বেশি। তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলে নতুন এই জাতের ধানে প্রচলিত জাতের ধানের মতো রোগবালাই নেই। লম্বা, চিকন প্রিমিয়াম কোয়ালিটির এই ধানের ভাত ঝরঝরে এবং খেতে সুস্বাদু।

শষ্য কর্তন ও মাঠ দিবসে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিএসএ’র ফিল্ড সমন্বয়কারী মোঃ নাজমুল হক বলেন, স্বল্প খরচে বঙ্গবন্ধু-১০০ ও ব্রি-ধান ১০২ চাষ করে ধানের বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হয়েছেন। হাইব্রিড ধানের সমান ফলন দিতে সক্ষম এই ধান দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষিতে বিপ্লব ঘটাবে। পাশাপাশি নতুন জাতের এই ধান চাষে কৃষকের গোলা ভরে যাবে। নিশ্চিত করবে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা।